মেহেরুজ্জামান সেফু : সীমাহীন সমুদ্রে ছেঁড়া পালে হাওয়া লাগিয়ে ভেসে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মাহফুজ। জীবনের গতি বেঁচে থাকতে থামিয়ে দিতে চান নাহ তিনি। জীবনের ক্রান্তিকালে লড়াই করছেন সঙ্গীহীন। বিবেকের তাড়নায় অকেজো দুটি পা নিয়েই চালাচ্ছেন অটোরিকশা। তবু নারাজ অন্যত্র স্বহস্ত বাড়িয়ে দিতে।
কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায় সপরিবারে বসবাস করতেন মাহফুজ। ছয় ভাইবোনের মধ্যে চতুর্থ তিনি। কৈশোরে লেখাপড়ার প্রতি অনীহা বোধে ধরেন অটোরিকশার হ্যান্ডেল। বাবার মৃত্যুর পরেই সহোদর ভাইয়েরা পৃথক হয়ে যায়, বোনদের বিয়েও সম্পন্ন হয়। মা,এক সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতেই মোটামুটি চলে যাচ্ছিলো মাহফুজের দিন। এভাবেই টানা ১২ বছর গাড়ি চালিয়ে সংসার চালাচ্ছিলেন তিনি।
হঠাৎই একটি দুর্ঘটনা কেড়ে নিলো তার জীবনের সব। গাছের উপর থেকে পরে গিয়ে হারিয়ে ফেলেন দু’টি পায়ের চালিকাশক্তি। যার চিকিৎসার জন্য দরকার হয় ৯-১০ লাখ টাকার। পৈতৃক সম্পদ থেকে পাওয়া জমি বিক্রির টাকায় প্রথমে গ্রামে এরপর ঢাকার সাভারে (সি আর পি) হসপিটালে চালিয়ে যান চিকিৎসা। শেষ দুই বছর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন ঢাকার সি আর পি তে। কিন্তু পৈতৃক সম্পদ বিক্রির সেই অর্থ ফুরিয়ে গেলেও ফিরে পাননি দু’টি পায়ের চলারশক্তি।
এমতবস্থায় তার অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ বুঝতে পেরে তার সহধর্মিণী তার সন্তানকে নিয়ে চলে যান অন্যত্র। তার এমন দুরাবস্থায়ও খোজ নেন না তাঁর সহোদর ভাইয়েরাও। আর তাতেই পৃথিবীর কঠিন নিষ্ঠুরতা স্বরূপে আবির্ভূত হয় মাহফুজের সম্মুখে। কিন্তু ভেঙে পরেননি তিনি। জীবন যুদ্ধে একাই লড়ে যাওয়ার পণ করেন নিজের সঙ্গে। মাকে গ্রামে পাঠিয়ে সিরাজ নামের এক ব্যক্তির পরামর্শে কিনে নেন অটোরিকশা। দৈনিক ৩০০/৪০০ টাকার ইনকামের টাকা যা দিয়ে বাসাভাড়া, খাওয়া, ঔষধের খরচ বহন করতে হয় তাকে । মাঝে মধ্যে মায়ের জন্যে গ্রামে পাঠায়ে দেন কিছু অর্থ।
রিকশা টির পূর্বের মালিক মাহফুজ কে প্রতিশ্রুতি দেন দৈনিক ৭০০-৮০০ টাকা রোজগারের। কিন্তু ক্রয়ের ৫ কর্ম দিবসের মধ্যেই দেখা যায় উল্টো চিত্র। ঠেলেঠুলে আয় করছেন ৩০০/৪০০ টাকা৷ তারপরেও মানুষ রুপি সেই হিংস্র প্রাণীর উপর দেখালেন না কোনো ক্ষোভ। সবটা মেনে নিলেন হাসি মুখে।
পাঠ্যবইয়ের থেকে জ্ঞান আহরণ করেননি তবু নিজেকে সমাজ এবং দেশের কাছে বোঝা হতে দেননি। ইচ্ছাশক্তি আর মনোবল ধরে রেখে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন স্ব কর্মের দ্বারা। তার এমন সাহসীকতা হয়তো আরোও একবার প্রমান করলো ইচ্ছা আর চেষ্টা থাকলে সবকিছুই সম্ভব।
এম কে
