ঢাকা : পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, পুলিশ সদস্যরা কোনোভাবেই কোনো ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। পুলিশকে দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে।
আইজিপি তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আরও বলেছেন, যারা অবৈধ অর্থ উপার্জন করে বড়লোক হতে চান, বাংলাদেশ পুলিশে তাদের স্থান নয়। তারা পুলিশের চাকরি ছেড়ে বাড়ি গিয়ে ব্যবসা করে বড়লোক হওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।
মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দফতর থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশ, ঢাকা ও ময়মনসিংহ রেঞ্জ এবং গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি এবং পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য প্রদানকালে এ কথা বলেন আইজিপি।
আইজিপি তার বক্তব্যের শুরুতে করোনা সংক্রমণ রোধে দায়িত্ব পালনকালে জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। যারা অসুস্থ আছেন তিনি তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে পুলিশি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, রূপকল্প- ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে নিরলস কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উন্নয়নের এ অভিযাত্রায় শামিল হয়ে পুলিশকেও উন্নত দেশের উপযোগী পুলিশ হতে হবে। করোনাকালে এই অভিযাত্রায় বাংলাদেশ পুলিশ অনেকদূর এগিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে আইজিপি বলেন, গণমানুষের দোরগোড়ায় পুলিশিংকে পৌঁছে দিতে হবে। বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে প্রান্ত থেকে কেন্দ্র সর্বত্র হাতে নিতে হবে উন্নয়নমুখী উদ্ভাবনী পুলিশিং কার্যক্রম। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কেন্দ্রিক বিট পুলিশিং কার্যক্রম পরিচালিত হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে তার দায়িত্বাধীন এলাকার প্রত্যেক নাগরিকের সুখ-দুঃখের খোঁজ নিবেন। বিপদে ও প্রয়োজনে মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। এ বিষয়ে একটি এসওপি প্রণয়ণের কাজ চলমান রয়েছে। শীঘ্রই সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনাসহ একটি এসওপি সকল ইউনিটে পৌঁছে দেয়া হবে।
আইজিপি বলেন, দেশের মানুষকে নির্মোহভাবে ভালোবাসতে হবে, মানুষকে কোনো প্রকার নির্যাতন ও নিপীড়ন করা যাবে না। সকল উপায়ে সর্বতোভাবে মানুষের পাশে থেকে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। দায়িত্বপালনকালে শারীরিক শক্তি নয়, আইনি সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে।
মাদকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। কোনো পুলিশ সদস্য মাদকের সঙ্গে অথবা মাদক ব্যবসার সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পুলিশ সদস্যদের কল্যাণ প্রসঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে আইজিপি বলেন, পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে। দায়িত্বরত অবস্থায় আহত, গুরুতর আহত ও নিহতের ক্ষেত্রে কল্যাণ সংক্রান্ত সুবিধাদি রয়েছে। এর পাশাপাশি চাকরিরত অবস্থায়ই সদস্যদের সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, কোনো পুলিশ সদস্যের ব্যক্তিগত অপরাধের দায়ভার তাকেই বহন করতে হবে।
আইজিপি বলেন, বর্তমান করোনাকালে বাংলাদেশ পুলিশ যেভাবে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাদেরকে সহযোগিতা করছে, নিজের জীবন বিপন্ন করে জনগণের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। বাংলাদেশ পুলিশের এ মানবিকতা দেশের মানুষের কাছে বাংলাদেশ পুলিশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
মানুষ পুলিশকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে, পুলিশকে ভালোবাসছে, শ্রদ্ধা করছে। মানুষের মনের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছে পুলিশ। মানুষের এ অভূতপূর্ব ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার মর্যাদা আমাদের রাখতে হবে।
তিনি বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে আমাদের এ অবস্থান ধরে রাখা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণের জন্য জনগণের পুলিশ হয়ে কাজ করতে হবে। দুর্নীতি ও মাদকসহ যেকোনো প্রকার পুলিশি মিসকন্ডাক্টকে কঠোর হাতে দমন করতে না পারলে জনগণের পুলিশ হয়ে ওঠা সহজ হবে না।
নিউজবিডি৭১/ এম কে /১৭ জুন ২০২০