মোঃ আঃ বাকের সরকার বাবর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) কসবা : কসবায় একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় জোনাকি আক্তার (২৫) নামে এক প্রসূতি ও তার শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রীন হেলথ হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটে। প্রসুতি ও তার শিশুর মৃত্যুর ঘটনা অর্থের বিনিময়ে ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও গোপীনাথপুর আলহাজ্ব শাহআলম কলেজের অধ্যক্ষসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তারা মালিক পক্ষের হয়ে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে বিদায় করে দেন প্রসুতির পরিবারকে এমনটাই অভিযোগ পরিবারের।
স্থানীয়দের অভিযোগ এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভুল চিকিৎসায় একাধিক প্রসুতির মৃত্যু হলেও অদৃশ্য কারণে পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৬ মে ভোর ৪টার দিকে উপজেলার বিনাউটি গ্রামের প্রবাসী ফারুক আহাম্মদের স্ত্রী জোনাকী আক্তারের প্রসব ব্যাথা উঠলে তার বাবার বাড়ী ফতেহপুর থেকে গোপীনাথপুর গ্রীণ হেলথ হাসপাতালে নিয়ে আসে জোনাকির মা সায়েরা বেগম।
অপারেশন থিয়েটারে তার শরীরে ইনজেকশন পুশ করার কিছুক্ষন পরই মৃত্যু হয় বলে ধারণা করছেন তার মা। অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার পর ২ ঘণ্টা পর্যন্ত তার মেয়ে ও বাচ্চাকে থিয়েটার থেকে বের না করায় তার মনে সন্দেহ জাগে। ২ ঘন্টা পর কথিত মহিলা ডাক্তার ওড়না দিয়ে মুখ ডেকে থিয়েটার থেকে বেরিয়ে যায়। হাসপাতালের লোকজনের ছুটাছুটিতে জোনাকির মায়ের সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। কিছু জানতে চাইলেই ধমক দেয় হাসপাতালের লোকজন। এই দুই ঘন্টার মধ্যে চলে ধামাচাপা দেয়ার সকল নাটক। নাটকের যবনিকা টানতে হাসপাতালে আসেন ইউপি চেয়ারম্যান এসএম মান্নান জাহাংগীর ও গোপিনাথপুর কলেজের অধ্যক্ষ আকরাম খানসহ কয়েকজন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। পরে তাদের পক্ষ থেকে জোনাকির মাকে জানানো হয় থিয়েটারে নেয়ার পর ভয়ে জোনাকি এবং তার শিশুটি মারা গেছে।
চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ঘটনা ধামাচাপা দিতে মনের মতো করে গল্প বানিয়ে বুঝিয়ে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করেন হাসাপাতলকে। পরে জোনাকির দাফন-কাফনের জন্য স্বজনদের হাতে নগদ ৩০ হাজার টাকা তুলে দেন হাসপাতাল মালিক পক্ষ। বাকি টাকা পরে বুঝিয়ে দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। সিজার করতে গিয়ে তার নাড়ি-ভুড়ি কেটে ফেলা হয়েছিলো। এতেই জোনাকি ও শিশুটির মৃত্যু হয়েছে জোনাকির স্বজনদের ধারণা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানায় এই হাসপাতালে আকলিমা নামে একজন সিনিয়র নার্স আছে। সেই অপারেশন করে থাকে। সে কোনো ডাক্তার নয়।
হাসপাতালের ম্যানেজার মো. সোহেল সরকার সাংবাদিকদের জানায়, এ ব্যাপারে তার কিছু বলার নির্দেশনা নেই। সব জানে ইউপি চেয়ারম্যান এসএম মান্নান জাহাঙ্গীর ও গোপীনাথপুর কলেজের অধ্যক্ষ আকরাম খান। পরে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা এই বিষয়ে কিছু জানেনা বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করে।
জোানকির মা সায়েরা বেগম বলেন, গ্রীন হেলথ হাসপাতালের কথিত মহিলা ডাক্তার ভুল চিকিৎসা করে আমার মেয়ে জোনাকি তার নবজাতক শিশুটিকে মেরে ফেলেছে। সরকারের কাছে এর বিচার চাই যেন আমার মতো আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোপীনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম মান্নান জাহাংগীর ও গোপিনাথপুর শাহআলম কলেজ অধ্যক্ষ আকরাম খান সাংবাদিকদের বলেন; রোগী থিয়েটারে নেয়ার পর ষ্ট্রোক করে মারা গেছে শুনেছি। জরিমানার মাধ্যমে ধামাচাপা দেয়ার বিষয়ে কিছু জানেনা বলে জানান তারা। এদিকে নিহতের মা সায়েরা বেগম ও পরিবারের লোকজন বলছে এদের নেতৃত্বেই জরিমানা করে শেষ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কসবা থানা কর্মকর্তা ইনচার্জ মোহাম্মদ লোকমান হোসেন বলেন; এই মৃত্যুর বিষয়ে কোন পক্ষ থেকেই অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নিউজবিডি৭১/এম কে/ ৯ মে ২০২০