নিউজবিডি৭১ ডেস্ক
ঢাকা : ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস, ভারী বর্ষণ, বন্যা, খরা, দাবানল, শৈত্যপ্রবাহ; দুর্ভিক্ষ, মহামারি, ভূমিকম্প, সুনামি প্রভৃতি।
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা কিছু কিছু বিপদ-আপদ বা বালা-মুসিবত দিয়ে মানুষকে সতর্ক করেন। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনুল কারিমে বলেন,
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوفْ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الأَمَوَالِ وَالأنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ
الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُواْ إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعونَ أُولَـئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَـئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ
‘আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান, মাল ও ফলফলাদির ক্ষতির মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা, নিজেদের বিপদ-মুসিবতের সময় বলে, ‘নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী’, তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭)
দুর্যোগের সময় করণীয় সুন্নত আমল: প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কিছু সুন্নত আমল করার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচার সুযোগ রয়েছে। হাদিস শরিফে আছে, যখন কোথাও ভূমিকম্প সংঘটিত হয় অথবা সূর্যগ্রহণ হয়, ঝোড়ো বাতাস বা বন্যা হয়, তখন সবার উচিত মহান আল্লাহর কাছে তওবা করা, তাঁর কাছে নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা, মহান আল্লাহকে স্মরণ করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা। এ ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘দ্রুততার সঙ্গে মহান আল্লাহর জিকির করো, তাঁর নিকট তওবা করো।’ (বুখারি ২/৩০; মুসলিম ২/৬২৮)।
মহান আল্লাহর জিকিরের সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে নামাজ পড়া, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত বা দোয়া-দরুদ পাঠ করা। দুর্যোগের সময় জিকিরের আরো উপায় হতে পারে ইস্তিগফার, তসবি পাঠ ইত্যাদি। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, প্রচণ্ড ঝোড়ো হাওয়া বইলে রাসূলুল্লাহ (সা.) মসজিদে যেতেন এবং নামাজে মশগুল হতেন। (মিশকাত শরিফ: ৬৯৬)।
সাহাবিদের জীবনে আমরা দেখি, বিপদে-মুসিবতে তাঁরা নামাজে দাঁড়াতেন ও ধৈর্য ধারণ করতেন। (মিশকাতুল মাসাবিহ: ৫৩৪৫)। ঝড়-তুফানের প্রাদুর্ভাব ঘটলে তাকবির (আল্লাহু আকবার (আল্লাহ মহান)) বলা ও আজান দেওয়া সুন্নত। (তবে এই আজানে ‘হাইয়া আলাছ ছলাহ’ (নামাজের জন্য আসো) ও ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ (সফলতার জন্য আসো) বাক্যদ্বয় বলার প্রয়োজন নেই)।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচার উপায়: মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে আশরাফুল মখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তিনি অযথা কাউকে শাস্তি দিতে চান না। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ হলো আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি। আল্লাহর আজাব থেকে বাঁচার জন্য আমল পরিশুদ্ধ করতে হবে। যে আমলে আল্লাহ খুশি হন, সে আমল বেশি বেশি করতে হবে। নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা ইত্যাদি ভালো কাজ করতে হবে। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘সদকা আল্লাহর অসন্তুষ্টিকে নিভিয়ে দেয় এবং অপমৃত্যু রোধ করে।’ (তিরমিজি শরিফ: ৬০০)।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহ করুণ এক রুপ হলো বজ্রপাত, যা মহান রাব্বুল আলামিনের শক্তিমত্তা ও ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআন মজিদে রয়েছে,
وَيُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلاَئِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ وَيُرْسِلُ الصَّوَاعِقَ فَيُصِيبُ بِهَا مَن يَشَاء وَهُمْ يُجَادِلُونَ فِي اللّهِ وَهُوَ شَدِيدُ الْمِحَالِ
‘তাঁর প্রশংসা পাঠ করে বজ্র এবং সব ফেরেশতা, সভয়ে। তিনি বজ্রপাত করেন, অতঃপর যাকে ইচছা, তাকে তা দ্বারা আঘাত করেন; তথাপি তারা আল্লাহ সম্পর্কে বিতন্ডা করে, অথচ তিনি মহাশক্তিশালী।’ (সূরা: রাআদ, আয়াত: ১৩, পারা: ১৩)।
ঘূর্ণিঝড় ও ঝড়ো বাতাসে যে দোয়া পড়বেন: হাদিসে ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, প্রবল বাতাস ও মেঘ-বৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মুক্ত থাকার অনেক দোয়া রয়েছে। এ দোয়াগুলো পড়ে নিজের জন্য এবং ঘূর্ণিঝড়সহ সব দুর্যোগে আক্রান্তদের জন্য দোয়া করা উচিত।
বিপদাপদ থেকে আত্মরক্ষায় প্রতিদিনের দোয়া: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেহ সকাল এবং সন্ধ্যায় নিন্মোক্ত দোয়াটি পড়বে; তাকে কোনো বিপদাপদ, বালা-মুছিবত স্পর্শ করবে না-
উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লাহিল লাজি লা ইয়াদূররু মাআস মিহি শাইয়ুন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামিই ওয়াহুয়া সামিয়ুল আলিম।’ (তিরমিজি, ইবনু মাজাহ, মিশকাত)।
এ সব বিপদকালীন সময়ে বিশ্বনবী (সা.) বেশি বেশি তাওবা ও ইসতেগফার করতেন এবং অন্যদেরকেও তা পড়তে নির্দেশ দিতেন।
নিউজবিডি৭১/এম কে/ ২০ মে ২০২০