ঢাকা : করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে প্রকাশ হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল। সেই ফল প্রকাশের প্রায় তিন সপ্তাহ পেরোতে চললো, এখনো উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না।
শিগগিরই যে এ প্রক্রিয়া শুরু হবে, সে কথাও শোনা যাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট মহল থেকে। অন্যদিকে একই কারণে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি বা সমমান) পরীক্ষারও আয়োজন করা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তই নিয়েছেন নীতিনির্ধারকরা।
এমন অবস্থায় এসএসসি, এইচএসসি বা সমমানের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। পড়াশোনার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় হতাশা কাজ করছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। করোনায় প্রতিনিয়ত মৃত্যু ও সংক্রমণের খবর তাদের ফেলেছে দুশ্চিন্তায়। শিক্ষাবিদরা অবশ্য এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলে আসছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
দেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার আয়োজন করা হয় এপ্রিলের দিকে। সেই এপ্রিল সামনে রেখে বহু আগে থেকে পরীক্ষার জন্য ভালো প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মিরপুর মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মার্জিয়া ইমা চৈতি। তবে মার্চ থেকে দেশে করোনার বিস্তার শুরু হলে ভাটা পড়ে প্রস্তুতিতে। করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি দিনে যত নাজুক অবস্থায় গেছে, ততটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার প্রস্তুতি। ইমা জানান, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে তার পড়ালেখায় মন বসছে না। প্রতিদিনের দুঃসংবাদে চিন্তাগ্রস্ত তিনি।
মামুন বলেন, দেশে যেভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে তাতে এখন আর কোনো কিছু ভালো লাগে না। অসুস্থ হলে হাসপাতালেও চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের পরিবার আক্রান্ত হলে কী পরিস্থিতি তৈরি হবে, সেই চিন্তায় পড়ালেখা করতে পারছি না।
এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক শনিবার (২০ জুন) বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু করা অসম্ভব। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক এবং কর্মচারীকে পরীক্ষার কাজে অংশগ্রহণ করতে হয়। এ সময় বড় ধরনের একটি জমায়েত তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষার আয়োজন হলে ভাইরাস আরও ছড়াবে। এ কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ার আগে কোনো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না।
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির বিষয়ে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে একাদশ ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করারও কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়াটি চালু করতে পারি। তবে ন্যূনতম অর্ধকোটি মানুষের এজন্য চলাফেরা করার ঝুঁকিও রয়েছে। আবেদন করতে অনেকে কম্পিউটার দোকানে, রাস্তায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও শিক্ষা বোর্ডে এসে ভিড় করবে। এতেও সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা চিন্তা করে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এইচএসসি পরীক্ষা ও উচ্চমাধ্যমিকের ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা হবে না।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম আমিরুল ইসলম বলেন, বোর্ড কর্তৃপক্ষ বিপুল ঝুঁকি নিয়ে এসএসসি ও সমমানের ফলাফল প্রকাশ করেছে। তবে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু করাটা কঠিন এবং অসম্ভব। আমরা পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণের জন্য অনেক পরিকল্পনা করেছি। তবে কোভিড-১৯ সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের হাতে কোনো বিকল্প নেই।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ) মাহবুব হোসেন বলেন, করোনা রোগীদের কেস প্রতিদিন বাড়ছে। সুতরাং পরীক্ষা আয়োজন করার জন্য পরিস্থিতি অনুকূল নয়। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত একাদশে ভর্তি ও পাবলিক পরীক্ষা শুরু করা সম্ভব হবে না।
নিউজবিডি৭১/এম কে / ২০ জুন ২০২০