আমিরুল ইসলাম, পেকুয়া : চট্রগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের অধিনে পেকুয়ার বারবাকিয়া, টইটং, শিলখালী, হারবাং সরকারি রিজার্ভ বনঞ্চলের গাছ কর্তন করে পেকুয়া উপজেলার আলহাজ্ব কবির আহমদ চৌধুরী বাজারে করাত কল শুরু হয়েছে, প্রতিনিয়ত পাহাড়ি গাছ অবৈধ ভাবে কর্তন হচ্ছে এই করাত কল গুলোতে। গতকাল সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বনের মধ্যমে পুরা পাহাড়ি অঞ্চল মরুভূমিতে পারিনত, মনে হচ্ছে এটা শাহারা মরুভূমির পাহাড়। গত ৫ বছর আগে বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ যার মধ্যে অন্যতম গর্জন সেগুন, আকাশমনি, করই ইত্যাদি প্রায় বিলিনের পথে। এই গাছ গুলো গর্জন, সেগুন, বিট কর্মকতার বাসভবের এরিয়ায় কিছুটা দেখা মিলেও কিন্তু পাহাড়ি বনঅঞ্চলে দেখা খুবই বিরল।
পাহাড়ি সেগুন, গর্জন, আকাশমনি, করই ইত্যাদি গাছ গুলো বারবাকিয়া, টইটং, শিলখালী, হারবাং থেকে প্রতিদিন নছিমন করিম গাড়িতে বোঝায় করে পেকুয়া বাজার করাত কলে নিয়ে আসে, পেকুয়া কলেজ গেইট গোল চত্বরে কিছু সময় দাড়িয়ে থাকলে বনঞ্চলের গাছ পেকুয়া বাজারের করাত কলে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ার মতো, পাহাড়ি বনঞ্চল এখন বিলিন। পাহাড়ে কিছু চারা গাছ ও লতাপাতা ছাড়া আর কিছু নাই। এই ভাবে চলতে থাকলে একদিন সম্পূর্ণ বিলিন হয়ে যাবে।
পাহাড়ি বনভুমি রক্ষায় এই করাত কল গুলো উচ্ছেদের কোন বিকল্প নাই। করাত কল উচ্ছেদ না করলে কোন অবস্থাতেই পাহাড়ি বনভুমি রক্ষা করা যাবে না।
বন কর্মকতারা নামে মাত্রই রক্ষা করতেছে নামে মাত্র দেখা শোনা করতেছে। প্রকৃত গতভাবে তাদের যোগসাজেই বনভুমি উজাট হচ্ছে।
পরিবেশবিদরা জানায়, প্রকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য পাহাড়ি বনভুমি অবসয় দরকার আর এই বনভুমি রক্ষা করতে হলে করাত মিল বন্ধ করতে হবে।
এই বিষয়ে গাছ ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি ফরিদুল আলমের কাছে জানতে চাইলে,তিনি বলেন” সরকার করত কলকে এখনো বৈধতা দেয়নি আমরা কিন্তু বারবার সেষ্টা করতেছি”। এরপরে সরকারি বনভুমি উজাটের বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি মোবাইলে কোন কথা বলতে রাজি হয়নি।
এই বিষয়ে বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকতা আব্দুল গফুর মৌলার কাছে জানতে চাইলে,তিনি জানান “আমার এখানে লোক বল কম হওয়ায় উচ্ছেদ অভিযানে সমস্যা হচ্ছে, অভিযানের জন্য ওসির কাছে পুলিশ চাইলে পুলিশ পাচ্ছিনা। ইউএনও ( উপজেলা নির্বাহী অফিসার পেকুয়া ) স্যারকে তিন বার চিঠি দিয়েছি করাত কলের বিষয়ে এখনো কোন সুরাহা মিলেনি। আমি এই বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে বারবার উপস্থাপন করেছি।”
এই বিষয়ে পেকুয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল আজমের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, “সরকারি সম্পদ উদ্ধারে রেঞ্জার আমার কাছে যখন পুলিশ ছেয়েছে তখন দিয়েছি, আবার অনেক সময় অন্য জায়গায় কাজে থাকলে তখন একটু দেরি হয়েছে। উদ্ধার অভিযানে যখন পুলিশ চাইবে তখন পুলিশ দিব।”
এই বিষয়ে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা সাঈকা শাহাদাতের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,”আমরা শীঘ্রই উচ্ছেদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিব।আর এটা শুধু উপজেলা প্রশাসেনর দায়িত্ব হলে হবে না, এখানে রেঞ্জর কিন্তু দায়িত্ব এড়াতে পারে না। ”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইউিস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভয়রনমেন্টাল সায়েনন্সসের পরিচালক
বিশিষ্ট বন ও পরিবেশ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মোহাম্মদ দানেশ মিয়া বলেন,”আমাদের বেচে থাকার জন্য বনভূমি অবশ্যই প্রয়োজন,কৃষি অর্থনীতির জন্য ২৫% বনভূমি থাকতে হবে,বনভূমি উজাট পৃথিবীর জন্য হুমকি।
বনভূমি না থাকলে আমাদের প্রানী বিচিত্রা থাকবে না।
পাহাড়ে উচু গাছ গুলাতে বিভিন্ন প্রানী বাসকরে যারা ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে থাকে।আর এই প্রাণী গুলা না থাকলে কিটনাশক কাজ করবে না। কৃষি অর্থনীতি ধবংস হয়ে যাবে। ফরেস্ট্রি রক্ষা করতে হলে
ফরেস্ট্রির এরিয়াতে করাত কল বসা যাবে না।
বন আইন যথাযত প্রয়োগ না থাকা ও বনকর্মকতাদের গাফিলাতিতে বনভূমি উজাট হচ্ছে”।
নিউজবিডি৭১/ এম কে / ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০
