ঢাকা : একটু সুখের আশায় পরিবার-পরিজন ফেলে সর্বস্ব ব্যয় করে প্রবাসীকর্মীরা খেটে মরছেন বিদেশ-বিভুঁইয়ে। পড়েছেন দালালের খপ্পরে। কর্মহীন হয়ে বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে কাটছে দাসত্বের জীবন তাদের ।
দালালদের শোষণ বাংলাদেশ থেকেই শুরু হয় । সম্প্রতি এর ভয়াবহ চিত্র মিলেছে লিবিয়ায় নির্মমভাবে নিহত হওয়া ২৬ বাংলাদেশির করুণ পরিণতির খবরে।
আকাশছোঁয়া স্বপ্ন দেখিয়ে মালয়েশিয়ায় অসহায় বাংলাদেশিদের নিয়েও ক্রীতদাস বানানো হচ্ছে। এর পেছনেও রয়েছে সক্রিয় দালালচক্র। বিগত জিটুজি প্লাসে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে দেশি রিক্রুটিং এজেন্সি সরকারের বেধে দেয়া ব্যয়ের চেয়ে শ্রমিকপ্রতি আদায় করেছে তিন থেকে শুরু করে সাড়ে চার লাখ টাকা পর্যন্ত।
পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে কাজ না দিয়ে বসিয়ে রেখে দাবি করা হয় বাড়তি টাকা বা বেতনের অংশ। সেটা দিলেই কাজ মেলে। এখানেও আরেক কারসাজি। ওই শ্রমিক যে কোম্পানিতে এসেছেন, হয়তো তাদের কোনো কর্মক্ষেত্রই নেই; নামমাত্র দালালি কোম্পানি। তারা তখন শ্রমিককে অন্যত্র চাকরিতে দেয় চুক্তির চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি বেতনে এবং মাসশেষে বাড়তি টাকাটা নিজেরা পকেটস্থ করে। দু-চার মাস পর সেই ভাড়া দেয়া শ্রমিককে চুক্তির প্রাপ্য টাকাও দেয়া হয় না; কেটে রাখা হয় ঋণ, থাকা-খাওয়াসহ নানা অজুহাতে। চুক্তি অনুযায়ী যা করার কথা নয়। এভাবেই চলছে শোষণ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বললেন, কী আর বলব ভাই। আপনি এসেছেন, কুশল বিনিময় করে চলে যান। সাপ্লাইয়ার কোম্পানির লোকজন রয়েছে। কিছু বললে আপনি যাওয়ার পরই আমাদের ওপর চলবে শারীরিক নির্যাতন।
দালালের প্রলোভনে পড়ে স্থানীয় এজেন্সির মাধ্যমে কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্মম নির্যাতনের শিকার তারা। দালালের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে তামিল গ্যাং দিয়ে চলে শারীরিক নির্যাতন। কখনও কখনও এক-দুই মাস কাজ করিয়ে পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দিচ্ছে একশ্রেণির বাংলাদেশি দালাল।
এবারও শ্রমিকদের প্রকৃত পাওনা থেকে কমিশনের নামে টাকা চলে যায় দালালদের পকেটে। এভাবে চলে বছরের পর বছর।
এসব মজুরি-খোয়ানো অসহায় মানুষগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো অভিযোগ করেন না। যেহেতু তাদের কাছে কোনো প্রমাণ থাকে না। আর সমাজের মুখোশধারী এই ছদ্মবেশিদের সঙ্গে পেরে উঠবেন না এমন ভয়ও সর্বক্ষণ তাদের তাড়া করে ফেরে।
নিউজবিডি৭১/ এম কে /০২ জুন ২০২০