মহিনুল ইসলাম সুজন: উজানের ঢলে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের দোহল পাড়া গ্রামের পুর্ব দোহল পাড়ার তিস্তা নদীর গ্রাম রক্ষা বেড়িবাঁধটি ভাঙনের কবলে পরায় এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে কর্তৃপক্ষ বাঁধটি সংস্কার(ওই অংশে পুনর্নির্মাণ) ও ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে যে কোনো মুহূর্তে গ্রামটির প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার সহ হাজার একর আবাদি জমি পানিবন্দি হয়ে পড়ার পাশা-পাশি বেশকিছু বসত ভিটা ও আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
রোববার (২৭ জুন)পর্যন্ত বাঁধটির বিভিন্ন স্থানে ছোট-খাটো ভাঙন দেখা দিলেও একটি স্থানে প্রায় ১শত মিটার বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এলাকাজুড়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়,সপ্তাহ খানেক আগে উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আকস্মিক ভাবে ওই বেড়িবাঁধটিতে ভাঙন শুরু হয়।
দু-একদিন পর পানি কিছুটা কমতে থাকার সাথে সাথে বাঁধে ভাঙনের তীব্রতা আরও বাড়তে থাকে।প্রতিদিন যুক্ত হচ্ছে নতুন করে ভাঙন।খুব দ্রুত বেরিবাঁধটি সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ কার্যক্রম শুরু না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।আমরা ভয়াবহ ঝুঁকিতে আছি।
ওই এলাকার মৃত আব্দুল ছাত্তারের ছেলে জামাল উদ্দিন (৭৫),মৃত শুকুর আলীর ছেলে আব্দুল্লাহ (৪৫),মৃত কোরবান আলীর মেয়ে সুফিয়া বেগম(৫০), সাইফুল ইসলামের ছেলে আবু তালেব (৪৮) বেশকিছু বাসিন্দা এই প্রতিবেদককে বলেন, ভাঙনের প্রায় এক সপ্তাহ হলেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ তো দুরের কথা সংশ্লিষ্টরা এক নজর তা দেখতেও আসেনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হলে রোববার ভাঙন স্থান পরিদর্শন করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিরা।
বর্তমানে বাঁধটি বিভিন্ন স্থানে ভাঙার পাশাপাশি একটি স্থানে বাঁধের বড় ধরনের অংশের ১শত মিটার নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় দিন-রাত আতঙ্কে থাকি। ইতিমধ্যে অনেকেই নিজের বসত ভিটা ফেলে রেখে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
আমরা সরকারের কাছে ত্রাণ চাইনা দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণ চাই।কেনোনা নদীর পানি যদি আরও বৃদ্ধি পায় তাহলে যে কোনো মুহূর্তে প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়ার পাশা-পাশি বেশকিছু বসত ভিটা নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার সাথে হাজার একর আবাদি জমিও পানিবন্দি হয়ে পড়বে।আরও হুমকিতে পড়বে দোহল পাড়া গ্রোয়িং বাঁধ,পাগল পাড়া বাজার সহ ইউনিয়নটির পুরো ২ নং ওয়ার্ড ও এর আশ-পাশের এলাকা।তাই তারা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোরালো দাবি জানান।
এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানা যায়, রোববার(২৭ জুন)ভোর ৬টায় তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচে পানি থাকলেও সন্ধ্যা ৭টায় তা কমে বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে(বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার)।
তবে সতর্কতার কারনে ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বাঁধটি কতৃপক্ষ দ্রুত মেরামত ও পুনর্নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহন না করলে ক্ষতির পরিমাণ ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।এলাকাবাসী সহ ভাঙনরোধে আমরা আপাতত বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহনের চেষ্টা করলেও খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থায়ী সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো) ডালিয়া ডিভিশনের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিষয়টি জানার পর রোববার সেখানে আমাদের প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে। পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট অনুসারে বাঁধ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ডিমলা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায় বলেন,বিষয়টি জেনে উক্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহেব কে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিস্তারিত জানাতে বলেছি।খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নিউজবিডি৭১/এসএইচআই
