জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে লঞ্চের ভাড়া ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আজ রোববার মতিঝিলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে লঞ্চ মালিকদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। পরে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে লঞ্চ চালানোর ঘোষণা দেন মালিকেরা।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগে জনপ্রতি সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল ১৮ টাকা। ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়ানো পর জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৩০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেছে বিআইডব্লিউটিএ।
বৈঠক শেষে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক গণমাধ্যমে জানান, লঞ্চভাড়া ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ১ টাকা ৭০ পয়সার পরিবর্তে ২ টাকা ৩০ পয়সা ও ১০০ কিলোমিটারের ঊর্ধ্বে ১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
যাত্রীপ্রতি ২৮.৮২ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছিল বিআইডব্লিউটিএ। পূর্বের কিলোমিটার প্রতি ১ টাকা ৭০ পয়সার সঙ্গে ০.৪৯ টাকা বৃদ্ধি করে এ ভাড়া প্রস্তাব করা হয়।
এর আগে বিকেলে বনানীতে বিআরটিএ’র প্রধান কার্যালয়ে মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে দেশে দূরপাল্লার বাস-মিনিবাসের ভাড়া গড়ে ২৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভাড়া নির্ধারণী কমিটি। একইভাবে মহানগর এলাকার বাস ভাড়া ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে কেবল ডিজেলচালতি বাসের ভাড়া বাড়বে, সিএনজিচালিত কোনো বাস বর্ধিতহারে ভাড়া আদায় করতে পারবে না বলেও জানিয়েছে বিআরটিএ। এসব প্রস্তাবের বিষয়ে একমত হয় দুইপক্ষ।
সভা থেকে বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা থেকে ১০ টাকা এবং মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা থেকে ৮ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রস্তাব অনুযায়ী, দুরপাল্লার বাস-মিনিবাসে প্রতি কিলোমিটারের জন্য ১ টাকা ৮০ পয়সা ভাড়া আদায় করা হবে। মহানগর এলাকায় বাসে যাত্রীপ্রতি কিলোমিটারে আদায় করা হবে ২টাকা ১৫ পয়সা। আর মিনিবাসে আদায় করা হবে ২ টাকা ৫ পয়সা।
এতদিন দূরপাল্লার রুটে যাত্রীপ্রতি ভাড়া কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সা, মহানগর এলাকায় বাসে ১ টাকা ৭০ পয়সা এবং মিনিবাসে ভাড়া ১ টাকা ৬০ পয়সা হারে ভাড়া আদায় করা হয়ে আসছিল।
বৈঠক শেষে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার জানান, আজই ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। নতুন ভাড়া কাল থেকেই কার্যকর হবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতুল্লাহ সারাদেশে বাস ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন।
অপরদিকে চলমান ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান গণমাধ্যমকে জানান, জ্বালানি তেলের দাম না কমা পর্যন্ত তারা এ ধর্মঘট অব্যাহত রাখবেন। বিআরটিএ সদর দপ্তরে ভাড়া পুনর্নির্ধারণের বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকে তারা অংশ নেননি। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করা হয়নি।
এর আগে বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে গত বুধবার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। এর প্রতিক্রিয়ায় গত শুক্রবার থেকে গণপরিবহনের পাশাপাশি পণ্য পরিবহনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন মালিকেরা।