জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি, ধর্ম নিয়ে কটূক্তি, সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনাসহ বিভিন্ন সময়ে যারা দল কিংবা দলের বাইরে, মন্ত্রী কিংবা মেয়র পদে থেকেও সমালোচনা করেছেন তাদের কেউ রক্ষা পায়নি। তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে। দেশ স্বাধীনের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে কার্যনির্বাহীর কমিটির বৈঠকে পদ থেকে বহিষ্কারসহ প্রাথমিক সদস্য থেকে আজীবন বহিষ্কার করে নিজ দলের ভেতরেই শাস্তির ‘উদাহরণ’ সৃষ্টি করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। যার সর্বশেষ উদাহরণ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেয়র জাহাঙ্গীর ‘অমার্জনীয় অপরাধ’ করেছেন। তিনি জাতির জনক ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যেসব কথা বলেছেন, তা সংবিধান লঙ্ঘন ও রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। তাকে ক্ষমা করা যাবে না। দল থেকে বহিষ্কারের পর সিটি করপোরেশনের মেয়র থাকতে পারবেন কি না, সে বিষয়টি আইনি পথে ফয়সালা হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরম্নদ্ধে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তাকে পাঠানো কারণ দর্শানোর চিঠি এবং জাহাঙ্গীরের জবাব পড়ে শোনাতে বলেন। চিঠি দুটি পড়ে শোনান আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ। এ সময় সভায় উপস্থিত বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় নেতা সমস্বরে জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কারের দাবি তোলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা দল থেকে জাহাঙ্গীরকে বাদ দিলাম। এখন আইনের পথে অন্য বিষয়গুলোর ফয়সালা হবে।’
গত অক্টোবরে জাহাঙ্গীর আলমের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। গোপনে ধারণ করা ওই ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি এক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপচারিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। এরপরই তার শাস্তির দাবিতে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
গত ৩ অক্টোবর দলীয় স্বার্থপরিপন্থী কর্মকাণ্ড ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমকে কারণ দর্শানের চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে জাহাঙ্গীর আলমকে ১৫ দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়। চিঠির জবাব দিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান জাহাঙ্গীর। তবে মেয়রের জবাব আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা ক্ষমার অযোগ্য মনে করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘মেয়র জাহাঙ্গীরের শাস্তির মধ্য দিয়ে যারা দলের আদর্শ, নীতিবিরোধী কথা বলবে, বক্তব্য রাখবে, কর্মকাণ্ড করবে তাদের এটা একটা ইঙ্গিত বা বার্তা বহন করছে। দলের ভেতরে থেকে দলের বিরুদ্ধে গেলে কেউ রেহাই পায় না। এটা হচ্ছে বার্তা।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীদের যারা দল, সরকার ও জাতির পিতা নিয়ে কটূক্তি করেছেন তারা কোনোভাবেই ছাড় পাননি। বিভিন্ন সময়ে দলীয় পদে থেকে দলের নেতিবাচক সমালোচনা করেছেন তাদের প্রাথমিক সদস্যসহ আজীবন বহিষ্কার করার উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী হাসিনাসহ সরকারের কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রকাশ্যে নেতিবাচক সমালোচনা করে ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন কাদের সিদ্দিকী। এরপর নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন তিনি।
কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর তার বড় ভাই আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে লাইম লাইটে টেনে আনেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধমে কার্যনির্বাহী সদস্য এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করা হয় লতিফ সিদ্দিকীকে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর তাকে মন্ত্রিসভার সদস্য করা হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর গঠিত মন্ত্রিসভায়ও রাখা হয় লতিফ সিদ্দিকীকে। কিন্তু নিউইয়র্কে এক আলোচনা সভায় পবিত্র হজ, তাবলিগ জামাত নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য রাখার দায়ে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হন লতিফ সিদ্দিকী। সংসদ সদস্য পদ হারান তিনি। মন্ত্রিসভা থেকেও তাকে বাদ দেয়া হয়। সর্বশেষ দল থেকে বহিষ্কার হলেন মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।