আমিনুল ইসলাম : ডিলার এর মাধ্যমে টিসিবির পন্য মজুদ করে মুদি দোকানে বিক্রীর অভিযোগ উঠেছে। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় নিন্ম আয়ের মানুষের মাঝে স্বল্প মূল্যে তেল চিনি ডাল খেজুরসহ কয়েকটি খাদ্য পন্য নির্দৃষ্ট স্থানে বিক্রির নির্দেশ থাকলেও কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে স্বার্থান্বেষী টিসিবির ডিলার পন্য ক্রয় করে নির্ধারিত জায়গায় বিক্রি না করে তার কর্মচারী দিয়ে বিভিন্ন মুদি দোকানে সরবরাহ করে এমন অভিযোগের উপর ভিত্তি করে অনুসন্ধানে উঠে আসে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য গত এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখ রাজধানীর দক্ষিণখান কেসি হাসপাতাল সংলগ্ন নোয়াপাড়া, ৬২৪ নম্বর মার্কেটে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি লীগের অফিসে দলিও সাইনবোর্ড ব্যবহার করে টেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র খাদ্য পন্য মজুদ করে মুদিদোকানে পাইকারি বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া যায় ডিলার আল আমীনের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দিনের বেলা আল-আমীন ট্রাক সেল দেয়ার উদ্দেশ্যে টিসিবির খাদ্য পন্য আনলেও নির্দৃষ্ট জায়গা থেকে দুপুরের দিকে পন্য নিয়ে এসে দলিও অফিসে মজুদ করে এবং পরদিন ভোর ছয়টার সময় ট্রাকের ড্রাইভার ও স্থানীয় প্রভাবশালী এবং সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মো.এনায়েত হোসেন হাওলাদারের শেল্টারে বিভিন্ন মুদি দোকানে পাইকারি বিক্রি করে থাকে।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) বিকাল ৪টার দিকে আল-আমীন ট্রাকযোগে টিসিবির পন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি লীগের অফিসে মজুদকালে হিউম্যান রাইটস মনিটরিং অরগানাইজেশন এর তদন্ত পরিচালক মোহাম্মদ জিয়াউল হাসান এর চোখে পড়লে বিষয়টি নিউজবিডি৭১কে জানান তিনি। নিউজবিডি৭১ বিষয়টি অনুসন্ধান করলে বেরিয়ে আসে আরো কিছু নতুন তথ্য। স্থানীয় এক ব্যক্তি নাম না জানানোর শর্তে বলেন, আল আমীন টিসিবির ব্যবসা করে। মূলত পন্য কিনে এনে দোকান দোকানে পাইকারি বিক্রি করে। এগুলোর মধ্যে তেল,চিনি,ছোলা,ডাল রয়েছে। নিয়মিতভাবে কোন কোন দোকানে বিক্রি করা হয়েছে নাম গুলো গোপন রাখা হলো।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আকরামুজ্জামান এর সাথে ফোনে কথা হলে তিনি জানান,অফিসে আমি যাইনা। টিসিবির ব্যবসা করে আল আমীন,বিষয়টি সে বলতে পারবে।
আল আমীন এর সাথে কথা হলে তিনি জানান,অতিরিক্ত মাল আমার গুদামে রেখেছি। ৮০০ কেজি ছোলা, ১৮০লিটার তেল, মসুর ডালসহ মালের বিবরণ আকরাম স্যারকে ম্যাসেজের মাধ্যমে জানানো হয়েছে। গুদাম কোথায় এটাতো দলিও অফিস এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান,এটা দলিও অফিস না আমার গুদামঘর। টিসিবির তেজগাঁও আঞ্চলিক অফিসের সহকারী কর্মকর্তা আকরাম হোসেন জানান,পন্য বিক্রির পর অতিরিক্ত হলে নিজস্ব গোডাউনে রাখতে পারবে।
বৃহস্পতিবার আল আমীনের ট্রাকসেল দেয়ার নির্ধারিত জায়গা ছিল মগবাজার তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে বিকাল ৪টায় আল আমীনের ট্রাক দক্ষিণখান পৌছাল কি ভাবে, সাধারন মানুষের মাঝে প্রশ্ন জাগে।
বিষয়টি নিয়ে নিউজবিডি ৭১ একটা প্রতিবেদন প্রকাশ হলে এলাকার মানুষ তৎপর হয়ে ওঠে। যার ধারাবাহিকতায় মোমবার রাতে আনুমানিক ১০দিকে দক্ষিণখানের গাওয়াইর এলাকার ২৭৩ নম্বর বাড়িথেকে টিসিবির তেল মজুদ করে বিক্রীর সময় স্থানীয় লোকজনের চোখে পড়ে পরবর্তিতে পুলিশকে খবর দিলে থানা থেকে পুলিশ ঘটনা স্থলে যেতে যেতে টিসিবির মজুদ কৃত তেল সরিয়ে ফেলে অবশিষ্ট ৬০লিটার তেলসহ একজন আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় দক্ষিণখান থানার সাবইন্সপেক্টর অনুজ কুমার সরকার। এব্যাপারে দক্ষিণখান থানায় একটি মামলা হয়। মামলা নং-২, তারিখ-০৫/০৫/২০২০ইং। মামলায় দুইজন কে আসামী করা হয়। (১)মো.স্বপন মিয়া(১৮) কর্মচারী,(২)মো. জহির মিজি(৪২)ডিলার। ঘটনার সত্যতা নিশ্চত করে দক্ষিণখান থানার অফিসার ইনচার্জ শিকদার মো. শামিম হোসেন বলেন, তেলসহ আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা করা হয়েছে।
অপরদিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি লীগের সভাপতি মো. আকরামুজ্জামান সম্পর্কে জানা যায়, একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক তিনি।
সরকারি বেতন ভাতা ভোগ করলেও দলিও সাইনবোর্ডের আড়ালে টিসিবির খাদ্য পন্য বিক্রীর বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে।
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মো.এনায়েত হোসেন হাওলাদারের সাথে কথা হলে তিনি জানান,‘আমি আল আমিনকে টিসিবির ব্যবসা করতে দুই লক্ষ টাকা দিয়েছি’।সরকারি উদ্দোগে নিন্ম আয়ের মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী পৌছানোর যে ব্যবস্থা করা হয়েছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সরকারের মহত উদ্যোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান সচেতন জনগন।
নিউজবিডি৭১/এম কে/ ৫ মে ২০২০