বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাসূল সা:-এর শ্রমনীতি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। শ্রমিকরা আমাদের সমাজে প্রতিটি স্তরে অবহেলিত। তারা প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত।
তিনি বলেন, শ্রমিকদের ওপর ইনসাফ কায়েম করা হচ্ছে না। রাসূল সা: সহ আল্লাহ প্রেরিত অধিকাংশ নবী রাসূল শ্রমজীবী ছিলেন। তারা শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করে গেছেন। রাসূল সা: ছিলেন শ্রমজীবীদের কাছের মানুষ। তিনি শ্রমজীবী মানুষদের খুব ভালোবাসতেন। রাসূল সা: ঘোষণা দিয়েছেন, শ্রমিকরা আল্লাহর বন্ধু। আল্লাহর রাসূল সা: শ্রমিকের অধিকার কায়েম ও তাদের প্রতি ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, বর্তমান সময়ের দুর্ভাগ্য শ্রমিক মেহনতি মানুষ সবদিক থেকে অধিকার বঞ্চিত। অথচ আমাদের কাছে শ্রমিকের অধিকার প্রতিতষ্ঠার জন্য অনুপম আদর্শ রয়েছে। তাই আজ এই কথা অনস্বীকার্য শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাসূল সা:-এর শ্রমনীতি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।
তিনি বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন কর্তৃক ভার্চুয়ালি আয়োজিত ‘রাসূল সা: ঘোষিত শ্রমনীতিতে শ্রমিকের অধিকার’ শীর্ষক জাতীয় সিরাত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ইসলামী শ্রমনীতি গবেষক ড. জি এম শফিকুল ইসলাম।
বিশেষ আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ও তালিমুল কুরআন ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল হালিম, বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ও কুরআন শিক্ষা সোসাইটির সভাপতি মাওলানা আব্দুস শহীদ নাসিম, ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক ও সংগঠক ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সহকারি সম্পাদক ড. রেজাউল করিম, বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও ব্যাংকার ড. নুরুল ইসলাম, ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানী।
এই সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের সহ-সভাপতি লস্কর মো: তসলিম, সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর হোসাইন, আব্দুস সালাম, মহিব্বুল্লাহ, দফতর সম্পাদক নুরুল আমিন, প্রচার সম্পাদক জামিল মাহমুদ প্রমুখ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, হালাল জীবিকা অর্জন ফরজ কাজ। শ্রমিকরা হালাল রুজি উপার্জন করে থাকে। তারা শরীরের ঘাম পায়ে ফেলে রাষ্ট্রের অর্থনীতির চাকা সচল রাখে। একটি সমাজ রাষ্ট্রে প্রতিটি শ্রমিকের অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু আজ শ্রমিকের ঘর থেকে হাহাকারের কান্না আওয়াজ বেরিয়ে আসে। শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। মাসের পর মাসের শ্রমিকের পাওনা বকেয়া থেকে যাচ্ছে। শ্রমিকের যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু দেয়া হচ্ছে না। ফলে এক বেলা খাওয়ার পর অন্য বেলা অনাহারে কাটাতে হয়। তাদের থাকার জন্য ভালো বাসস্থান নেই। সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারে না। তাদের ভালো পোশাক ক্রয় করতে পারে না। আজ তারা অর্থবিত্ত না থাকায় নূন্যতম সম্মানটুকুও পায় না। অথচ এই রকম হওয়ার কথা ছিল না। রাসূল সা: শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার পাওনা পরিশোধ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।h
তিনি আরো বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, শ্রমিক ও তুমি সহোদরভ ভাই একই। তুমি যা খাবে তাকে তাই খাওয়াবে। তুমি যা পড়বে শ্রমিককে তাই পড়াবে। শ্রমিককে এমন কাজ দিবে না যা তার সাধ্যের বাহিরে। যদি দিতে হয় তবে তাকে সহযোগিতা করবে। রাসূল সা: শ্রমিককে দিনে সত্তরবার ক্ষমা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমি মালিক ভাইদের প্রতি হাদিসগুলো অনুসরণ করতে বিশেষ ভাবে আহ্বান জানাই।
মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, দ্বীনকে বিজয় করতে যুগে যুগে শ্রমিকরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। আমাদের দেশেও দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শ্রমিকরা অগ্রগামী। ইনসাফপূর্ণ রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে শ্রমিকরা বর্তমান সময়েও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের এই অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
মাওলানা আব্দুস শহীদ নাসিম বলেন, আজ আমাদের সমাজে প্রতিটি জায়গায় শ্রমিকদের অসম্মান করা হচ্ছে। তারা অভাবি হতে পারে কিন্তু আমলের দিক থেকে তারা অনেক বেশি খালেস। কাল কেয়ামতের ময়দানে আল্লাহ বান্দাহর চেহারার দিকে তাকাবেন না। সেদিন শ্রমিকরা আল্লাহর কাছে পুরস্কৃত হবেন।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান বলেন, রাসূল সা: সকল যুগের সকল মানুষের কাছে একমাত্র আদর্শ। তিনি নিজে শ্রমজীবী ছিলেন। শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ছিলেন অগ্রগামী। তার দেখানো পথে রয়েছে সকল পথের সকল মতের শ্রমিকের মুক্তি। তাই অধিকার বঞ্চিত শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাসূল স:-এর শ্রমনীতি অনুসরণ করা ছাড়া ভিন্ন পথ আমাদের সামনে নেই। তাই আজ শ্রমজীবী মানুষদের মুক্তির জন্য দেশের সকল শ্রমিকদের রাসূল স: দেখানো আদর্শিক পথে নিয়ে আসতে হবে। তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। শ্রমিকরা আদর্শিক পথে ঐক্যবদ্ধ করা গেলে শ্রমিকের মুক্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।